কি’রে টুপি আর মোজাটা পরলি ! আর তোর মা বেরিয়েছে না , দেখ-তো !
বাবা , -ও মা , তোমাদের হল ।চলো , কতক্ষন হয়ে গেল গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে ।আসো , আসো , জলদি আসো ।
আমি শীতের শয়টার, টুপি, মোজা পরে এবং আমার লক্ষ্মী ভান্ডারে রাখা কিছু খুচরো পয়সা প্যন্টের পকেটে পুরে দৌড়ে গাড়িতে উঠলাম এবং বসলাম পেছনের শীটে ।বাবা, মা, দাদু, দিদা কিছুক্ষন পরেই গাড়িতে উঠে পড়ল সবাই ।বাবা সামনের শীটে বসল, মা আর দিদা তার পরের শীটে এবং দাদু আমার পাশের শীটে আমার সাথে মিলেই বসলো ।ড্রাইভার গাড়ি স্ট্যট করলো এবং ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলাম ।আমি একবার আমার বন্ধ করা ঘরটার দিকে তাকালাম, যেন কিছু একটা ফেলে এসেছি ।তারপর ভাবলাম , যাকগে্ মাত্র তো এক মাসের সফর ।তারপর না হয়- ফিরেই তো আসছি ।
গাড়ি থেকেই যখন স্টেশনে নামলাম তখন সকাল আট’টা ।সাড়ে আটটায় ট্রেন ছাড়বে ।আমরা সবাই আমাদের জিনিসপত্র চার নম্বর বগিতে তুলেদিয়ে যে যার শীটে আরামেই বসে রইলাম এবং আমার পাশে বসল দাদু ।ভোঁ বাজিয়ে ট্রেন চলতে শুরু করল ।খুবই খুশি লাগল মনে ।আসলে আমরা সবাই বেড়াতে যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডের পৌড়িতে ।দাদুর মুখেই শোনা শীতকালে মনরোম জলবায়ু থাকে ওখানে ।শীতের ছুটির এক মাস পুরো ওইখানে বেড়িয়ে কাটাবো ।দাদুর কিছু পুরোনো স্মৃতি ওই খানেই জড়িয়ে আছে আজও ।তাই আজ সেজে গুজেই পাড়ি সোজা পৌড়িতে ।
কিছুটা পথ যেতেই আমি দাদুকে বললাম, অনেকক্ষন হয়ে গেল দাদু এবার বের করো ‘ঠাকুমার ঝুলি’ ।দাদু মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘এই যা দাদুভাই আমিতো একদম ভুলেই গেছি , তোর প্রিয় গল্পের বইটা আনতে ।যা- , এখন আর কি করা যাবে বল’ ।আমি একটু রাগ দেখানোর ভান করলাম দাদুর কাছে কারন আমি জানতাম দাদুর এমনই ভুলের জন্য খুব সাজা পায় আমার কাছ থেকে ।দাদুকে বললাম , আমি আজকে তোমার কোনো আর্জি শুনবো না , তোমার সাজা আজ থেকে পুরো ত্রিশটা দিনই আমাকে গল্প শোনাতে হবে ।দাদু একটু কপাল চুলকানোর পর বলল আছা কথা দিলাম ।তবে হ্যাঁ দাদুভাই প্রতিটি গল্প মন দিয়ে শুনতে হবে আর প্রতিটি গল্প শোনার পর এক একটি করে প্রশ্ন করবো ।আর না দিতে পারলে উত্তর, তখন আমার কাছ থেকে সাজা , মঞ্জুর ।আমি টপ করে বলে দিলাম দাদুকে, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, কথা দিলাম’ ।দাদু গল্প শুরু করল ।
সমুদ্রের মাঝখানে একটা দেশ ছিল ।নাম ছিল মালিপুর ।সেখান কার মানুষ জন ছিল খুব শান্ত এবং নিরিহ প্রকৃতির ।দেশটির চারিপাশ ছিল সবুজেই ঘেরা ।ওই দেশটাতে নানান রকমের বলতে গেলে সবই রকমের ফুলেরই চাষ হত, এবং ওগুলো দেখাশুনা করার জন্য প্রতিটি ঘর থেকে একজন করে মালি থাকতো, তাই ওই দেশটির নাম মালিপুর নামেই ক্ষ্যত ।সেখানকার হালি নামে এক রাজা দেশটাকে চালাতো ।রাজা হালির এক শেহেজাদা এবং তিন শেহেজাদি ছিল ।রাজার বেগম সাহেবা অর্থাত মালির রানী গার্গি ছিলেন ওই দেশের সব থেকে বড় রক্ষাকর্তা , রাজার থেকেও- ।
কিছুক্ষন বাদে-,গল্পটি শুনতে শুনতে আমি দাদুকে অতি আগ্রহের স্বরে বলে উঠলাম , তারপর !তারপর ! দাদু আবার শুরু করল- ,
একদিন রানীর ভীষন অসুখ হয় ।মালিপুরের সব বড় বড় বৈদ্যি রানীকে দেখে বলে দিয়ে যায়, ‘রানীর এ অসুখ সারার নয়’ । তারপর থেকে ওই দেশটির হাল বেহালে পরিনত হয় ।সাথে সাথে রাজাও ভেঙ্গে পড়ে ।তাই তার একমাত্র শেহেজাদা ধনুকবীর ‘বীরল’ রাজা হয় ।তারপর থেকে জানিস দাদুভাই ওই দেশটাতে নানান রকম শত্রুদের আক্রমনে ওখানকার মানুষ জন খুবই অত্যাচারিত হতে থাকে, কারন, ওই বীরল খুবই বিশ্বাস ঘাতকতা করে দেশের মানুষজনের সাথে, এমনকি ওর মাতা পিতার সাথেও ।কিছুদিন বাদে রাজা বীরল তার তিনজন বোনকে অর্থাত কৃ , ত্রি ও দ্বি-কে বিভিন্ন দেশের মিত্রপক্ষ রাজাদের বিলিয়ে দেয় লক্ষাধিক স্বর্ণমুদ্রার পরিবর্তে ।তারপর দেশের ভার এক শোষনকারি রাজার হাতে দিয়েই বেরিয়ে পড়েন রাজা নানান তীর্থস্থানে ।জানিস দাদুভাই- ওই দেশ আজও শোষন-কারিদের হাতে সোপা আছে I
আমি গল্পটি শুনে দাদুকে বললাম , আমি যদি ওখানে থাকতাম না দাদু , তাহলে ওই রাজাকে কান ধরিয়ে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখতাম আমার সামনে সারাক্ষন এবং আরো ভীষন ভীষন এক্কেবারে কঠিন সাজা দিতাম ।আচ্ছা দাদু আমরা যদি এই ছুটিটা ওই দেশটাতে গিয়ে কাটাই তবে কেমন হত, আর হাতে তো আমাদের পুরো একটি মাস ।প্লীজ্ , প্লীজ্ দাদু চলোনা , আর বাবাকে বলোনা যেন আমরা পৌড়িতে না গিয়ে মালিপুরে যাই, প্লীজ্ দাদু প্লীজ্ ।
দাদু একটা জোরালো হাসির পর বলল , আরে দাদুভাই এটাতো গল্প , আর এটা সত্যি না , তাহলে কোথায় নিয়ে যাবো তোকে , বল্ ।তুই বরং ঘুমিয়ে যা একটু , উঠলেই আবার একটা নতুন গল্প শোনাবো ।এই বলে দাদু ব্যগ থেকে একটা বড় শাল বের করে ঘুড়িয়ে দিল আমায় ।আমি শালটাকে জড়োসোড়ো করে গাড়ির কাঁচের মধ্যদিয়ে বাইরের দৃশ্যে মিশে গেলাম I
তখন বিকেল ।হালকা একটু ঘুমানোর পর আমি যখন বাইরের দিকেই চোখ মেললাম ঠিক তখন দেখতে পেলাম পথের পাশেই কিছু লোকজনকে ।আরো দেখতে পেলাম তাদের পাশে পড়ে রয়েছে কিছু শুকনো এবং কিছুটা সতেজ পাতার ঢের ।
জানার আগ্রহে দাদুকে ডাকলাম আর বললাম, দাদু, দাদু দেখ দেখ ওগুলো কি, আর, -এরা এমনই বা বসে আছে কেন ?
দাদু ঘুমাচ্ছিল তখন ।আচমকা উঠেই শীটের উপর রাখা চশমা পরেই বলে উঠল , কি হল আবার তোর ! কোনটা , আবার দেখা- ।
আমি গাড়ির কাঁচ খুলে দিলাম এবং আঙ্গুল দেখিয়ে আবার বললাম দাদুকে- ।দাদু শুনে বলল, আরে –‘এরা হল যাযাবর ।আর এদের ঘরতো -এটাই ।এরা সবসময় লোকের কাছেই হাত পেতে বেঁচে থাকে জানিস্ ! এবং ওদের ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদেরও খাওয়ায় ঠিক এমন করেই ।সমাজের সবথেকে- নিচু জাতের মানুষ হিসাবেই এরা পরিচিতি, বুঝলি ! তাই এদের থাকার যায়গা টুকুও নেই ।আর -ওই পাতা গুলো হল এদের শীতকালের পোশাক ।শোবার আগেই কিছু পরিমান নীচে বিছিয়ে দেয় আর কিছু পরিমান শরীরের উপরে বিছায় ।এমনই করেই শীতটা পেরোয় এদের , এমন কি পৃথিবীর কোণায় কোণায় যত আছে তাদেরও’ ।
দাদুর এমন করুন বাণী শুনার পর আমার কিছু আগ্রহিমুলক প্রশ্ন বেরিয়ে আসে এবং দাদুকেও বলি, দাদু আমাদের মত ওদের শীতের পোশাক নেই কেন ? আর এরাও তো দেশের নাগরিক ! তবে এদের ঘর নেই কেন ?
দাদু একটু মাথা নেড়ে আমায় বলল, ‘এখন তুই বুঝতে পারবি না দাদুভাই’- ।‘আর একটু বড় হ , তখন ঠিক- বুঝতে পারবি’ ।আর একটা দিনের পর তো আমরা পৌঁচ্ছেই যাচ্ছি দাদুভাই ।তারপর না হয় একদিন বেড়িয়ে আসবো দুজন মিলে, কেমন ।
আমি আবার আমার মনটাকে বাইরের দৃশ্যে হারিয়ে দিলাম এবং নানান ভাবনা ভাবতে লাগলাম ।‘যদি এদের মত আমিও হতাম, যদি এদের মত টুপি, শয়টার, চাদর না পেতাম তাহলে দুঃখ কি, কষ্ট কি হয়তো ভালো ভাবে জানতে পারতাম’ ।তবে কি আজ আর এখানে থাকতাম ।দাদু, দিদার, মা বাবার এমন স্নেহ মাখা আ’দর কি আর পেতাম ! আমি খুব ভাগ্যবান ।তবে, ওদেরটা বেশ মোমের মত ।পোড়াতে চাইলে পোড়ে আর গলাতে চাইলেও গলে, হয়ত- I
পরেরদিন সূর্য্য ডোবার আগেই আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁচ্ছে গেলাম ।সবাই সবার সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে এক একটা রুমের মধ্যে প্রবেশ করে, পছন্দের মত ।আমারটা পছন্দের ছিল না ।কিন্তু, ছিল রাস্তার ধারে এবং একটা জানালাও ছিল, তাই কারোর কাছে এতটা আর্জি করিনি ।কিছুক্ষন বাদে- দাদুও তার সব জিনিস পত্র নিয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে ।তাতে আমি খুব খুশি -হলাম I
বেশ মজা করে কয়েকটা দিন সবাই এদিকে ওদিকে গেলাম, ঘুরলাম, আরো কত কি খেলাম । সবাই তার প্রিয়ো প্রিয়ো জিনিস গুলো কিনে ফেলল ।আমি কিছুই কিনলাম না । পরে কেনার আর্জি করে বেরিয়ে আসি ওদের থেকে ।তখন আমার মনটা ছিল শুধুই –ওই লোক গুলোর দিকে ।
একদিন বিকেল বেলা দাদু ঘুমোচ্ছিল ।আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে- রাস্তা দিয়ে লোকেদের যাতায়াত দেখছিলাম ।হঠাত- দেখতে পেলাম -ওই যাযাবরদের ।ভীষন আগ্রহ জাগলো ।ভাবলাম, ‘যাই না কেন একবার ওদের পাশে ।ঘুরেই আসি খানিকটা সময় ।জেনেই আসি না কিছু অজানা তথ্য’ ।তাই- বেরিয়ে পড়লাম, দাদুকে কিছুই না জানিয়ে I
বাইরে যেতে না যেতেই খুব ঠাণ্ডা অনুভব করলাম ।তাই আবার ফিরে এসে শীতের শয়টার এবং মাপলার লাগিয়ে পুনরায় বেরিয়ে পড়লাম ওই লোক গুলোর দিকে ।কিছুটা পথ যেতে না যেতেই অনেক লোকজনদের হট্টগোল শুনতে পেলাম সামনের খোলা ময়দানেতে ।আমিও দৌড়ে গেলাম খুবই আগ্রহে ওই গোলা-কারিদের পাশে , ঘটনাটায় কি হয়েছে কিংবা কি হল-তাই জানার জন্য ।গিয়ে দেখি – ছোট্ট এক শিশু (বোঝা মুশকিল ছিল ও বালক না বালিকা, কারন ওর মা তাকে তার ছেঁড়া আঁচল তলে ঢেকে রেখেছিল শীতলতা নিবারনের জন্য ।পরে জানতে পারি ও লিনা কুমারী I)ঠাণ্ডায় ছটপট করছে তার মায়ের কোলে আর তার মা তাকে ঢেকে রেখেছে আঁচলতলে, লুকিয়ে রেখেছে তার তলপেটে গরমতার জন্য ।আর চারিপাশে ঘিরে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা আর কেউ নয় ওদেরই পড়শি, -ওই যাযাবরের দলেরা ।খানিক্ষন দাঁড়িয়ে দেখলাম ।কি করবো , কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না ।ধীরে ধীরে লোকেদের ভিড় কমতে লাগে ।আমি তখনও দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ওই মাকে- , যে তার কোলাদর দিয়ে ঘুমেই আচ্ছন্ন করিয়ে দিচ্ছিল তার ছোট্ট মেয়ে লিনাকে ।আমি সাহস করে একটু এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে ।এগিয়ে যাওয়াতেই লিনার মা আমার দিকে একটুখানি মুখ তুলে তাকায় , ফের নিজের কাজে মগ্ন হয় ।আমি আবার সাহস করে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে এবং ওদের পাশেই হাঁটু গেড়ে বসেই পড়লাম ।তখন একটু বিচলিত (আনন্দিত) দেখালো ওর মাকে ।তাই আমি আর দেরি না করেই- আমার শরীর থেকে মাফলার এবং শয়টার-টা খুলে ওদের দিকে বাড়াই ।একটু ভাবে । তারপর আমার হাত থেকে মাফলার আর শয়টারটা নিয়ে হাঁটুর উপর রেখে এক হাতেই আমার মাথায় কোমলতার হাত বুলিয়ে দেয় এবং একটা আদরভরা চুমু দেয় আমার কপালে । তারপর আমায় বলে , ‘কিয়া নাম হে রে বেটা তেরু’ ।আমি একটু কপাল কুঁচকাই ।ও বুঝে নেয় ।তাই ফের আবার বলে , ‘কিয়া নাম হে- বেটা তুমারা’ ।আমি একটু একটু জানতাম , দাদুর কাছে শিখেও ছিলাম হিন্দিতে কথা বলা ।তাই তার প্রত্ত্যুতরে বললাম , ‘মে রাজুনাথ রায়’ ।‘কলিকাতা শহর সে আয়া হু এহিপে বেড়ানেকে লিয়ে’ ।‘ ও সামনে বালা পিলা কালার কি ঘর মে হাম সব রেহেতে হে ।আচ্ছা চলতা হু মে, অনেক টাইম হো গায়া ।ফের দু-বারা আউঙ্গা’ ।বায়...!
আসার সময় যখন আমি পিছনের দিকে একবার ঘুরে তাকালাম তখন আমায় বলল স্বজরে - , ‘ভগবান তেআরু ভল্লু করুলু’ ।‘হামেসা জিয়ুন্ত রে, লৌড়’ ।
যদিও এর মানে ঠিক জানতাম না , তাই এতটা এর পিছনে মনস্থির না দিয়ে খুব দ্রুত বাসায় ফিরলাম, কারন ঘরে কাউকে বলে আসা হয়নি আমার ।আর এদিকে একটা পাতালা টি-শার্ট ছিল গায়ে ।সন্ধ্যে নামতে আর কয়েক পল বাকি ছিল ।দাদুর মুখে শুনেছি এই সাল খুবই শীত পড়েছে পৌড়িতে ।অনুভবও করলাম খুব ।তাই দ্রুত পায়ে যখন ফিরলাম বাসায় , তখন সবাই চিন্তিত আমাকে নিয়ে । শুধু দাদুর জন্যই বেঁচে গেলাম । বাবাতো আমাকে মার মার অবস্থায় ছিল ।যাকগে্ , পরে দাদুকে সব খুলে বললাম ।দাদু শুনে শুধু একটি কথাই বলল সেদিন, ‘ক্যারি ওন দাদুভাই’, ‘ক্যারি ওন’ । পরে বাড়ির লোকজনও জানতে পারে ।তারাও খুব খুব সাবাসি দেয় আমায় ।সবার থেকেই বেশি পাই বাবার কাছ থেকে ।
এমনি করে এক মাস হতে আর মাত্র দুই দিন বাকি ।ঘরে ফেরার সময় হয়ে এল ।আজ বিকেলেই ফিরছি, কারন আগের এক তারিখ থেকেই স্কুল চালু ।সবাই সবার সমস্ত জিনিসপত্র গোটানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।আমি কাজের ফাঁকে দাদুকে ডেকে বললাম, ‘দাদু আমার দুই হাজার টাকা চাই এখন , মনের মত সমস্ত জিনিসপত্র কেনার-কাটার জন্য’ ।দাদুও কালবিলম্ব না করে আমাকে দিয়ে দিল, কারন আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি ছিল রওনা দিতে ।আমি সকাল বেলা শেষ বারের মতো- এক কাপ চায়ের পর সোজা আমার ঘর থেকে আমার কিছু খুচরো পয়সা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, দাদুকে জানিয়ে ।দাদু আমার সাথে যাওয়ার আগ্রহ দেখাতে- আমি মানা করে দি , কারন আমার উদ্দেশ্যটা ঠিক এটা ছিল না ।তাই, কালবিলম্ব না করে আমিও- দ্রুত পা চালালাম মার্কেটের দিকে ।আধা ঘণ্টার রাস্তা বিষ মিনিটেই পৌঁচ্ছে গেলাম ।প্রথমেই গিয়ে কয়েকটা শাল কিনলাম ।তারপর , কিছু রঙ-বেরঙের টুপি এবং শয়টার কিনে সোজা চললাম -ওই লোক গুলির দিকে ।কিছুক্ষন পরেই আমি পৌঁচ্ছে গেলাম ওই খোলা ময়দানেতে, যেখানে বসেছিল লিনা এবং লিনার করুনাময়ী মা ।গিয়ে দেখলাম-, সেখানে কেউ নেই ।খুবই হতাশ হলাম ।মনে মনে ভাবলাম, ‘যাকগে্ বড্ড দেরি করে ফেলিনি তো ! যদি না করে থাকি তবে কারোর দেখা নেই কেন !
খানিকটা এগিয়ে যাওয়াতেই দেখতে পেলাম এক বৃদ্ধকে , যে তার দুইটি পা ছড়িয়ে একটি খুঁটিতে ঠেস দিয়ে ঝিমিয়ে বসে রয়েছে ।আমি গেলাম ওই বৃদ্ধটার কাছে -খুবই আগ্রহে ।আমাকে দেখতে পেয়ে বৃদ্ধটি খুব ইতস্তত হয়ে যায় ।আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘দাদাজি এহিপে লিনা নামকি এক ছোটি লেড়কি ব্যয়েঠতি থি , কাহা গাই পাতা হে ! আজ উসকে লিয়ে কুছ কাপড়া লে কে আয়া থা, অর আপ লোগোকে লিয়ে ভি ।পাতাহে ! উন লোগ কাহা গায়া’ ।ধীরে ধীরে ওই বৃদ্ধটি তার হাতের বাঁকা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে খুবই ধীরে এবং কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘ব –হত্ দুর গায়া , উন লোগ ।শাম কা টাইম বাপস্ আয়ে-গা’ ।শোনার পর, একটু দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম ।তারপর বললাম , ‘দাদজি এ লো , এ আপকে লিয়ে, অর এ লিনা কি লিয়ে, অর- এ লিনা কি মা কি লিয়ে ।বাঁচা হু-আ সারে তুমারে পড়োসিয়ো কে লিয়ে । এ তুম আভি প্যহ্যন লো, অর- মে চলতা হু ।যব লিনাকি মা আ যায়ে , তব তুম বল দে না রাজু আয়া থা এ সারি দে কে গায়া ।আগর, মেরি নাম বলনে সে মাজি কো ইয়াত নেই আয়ে তো তব তুম বল্ দেনা জিসনে তুমারি লিনাকে লিয়ে শ্যয়টার দিয়া থা’ । ‘আচ্ছা মে চলতা হু দাদাজি , আপনা খেয়াল রাখনা’ ।
বিকেলের ট্রেনে বাড়ি ফিরছি সবাই হাজারো স্মৃতির ভিড়ে । মন চায় না , তবু আসতেই তো হবে , কোনো করাও নেই । আসতে আসতে অনেক কিছু ভাবতে লাগলাম, ‘ আচ্ছা, যদি শীত কথার আসল অর্থটা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করে, তাহলে হয় তো আমরা ঠিক মতো বলতে পারবো না, কারন শীত আসার আগেই আমরা তার নিবারনের উপায়টা বের করে রাখি ।শীতের অনুভব ঠিক মতো বোঝার আগেই লেপ , কম্বল, চাদর , আর টুপি-শয়টারের মধ্যেই বসবাস চালু করে দি ।আর যারা শীতের অনুভবটা খুব ভালো করে পেয়েছে কিংবা এখনো পায়, তাদের ক্ষেত্রে এর অর্থটা বলা খুবই সহজ ।যা আজ আমার এই এক মাসের শীতের ছুটিটাকে যদি পুনোরাই দোহোরাই, তাহলে বোঝা যাবে ‘কত ধানে কত চাল’ ।তবে ছুটির এই একমাসেই যে অনুভবটা করলাম আমি , সত্যি, ‘শীতটা শুধু ওদেরই বটে’ I